Mesut Ozil Retired bdlifechart |
আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর ঘোষণার আগে মেসুত ওজিলের পূর্ণ বিবৃতি:
"তর্কসাপেক্ষে বলা যায় যে, গত দু মাস ধরে যে বিষয়টা আমার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো আমার প্রতি জার্মান ফুটবল বোর্ডের অসদ্ব্যবহার, বিশেষ করে বোর্ড প্রেসিডেন্ট রাইনহার্ড গ্রিন্ডেলের আচরণ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে ছবি তোলার পর ইওয়াখিম ল্যোভ আমাকে অবিলম্বে ছুটি বাদ দিয়ে সোজা বার্লিনে গিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে সোজাসুজিভাবে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলেন। আমি এই ছবি তোলার পিছনে আমার জাতিসত্তা বা পারিবারিক ইতিহাসের যুক্তি যতোই দাঁড় করাতে চেয়েছি, গ্রিন্ডেল তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দিয়ে আমাকে ততোই হেয় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। যদিও তাঁর কাণ্ডকীর্তি পুরোটাই ছিলো হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে, তারপরেও আমরা এটুকুতে সম্মত হই যে ঐ পরিস্থিতিতে ফুটবল এবং আসন্ন বিশ্বকাপের ব্যাপারে মনোযোগ দেয়াটাই ভালো ছিলো। এজন্যই আমি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সময়টায় জার্মান ফুটবল বোর্ডের "মিডিয়া ডে" -তে অংশগ্রহণ করিনি। আমি জানতাম যে, যেসব সাংবাদিক ফুটবল বাদ দিয়ে রাজনীতি নিয়ে কথা বলবে, তারা আমাকে খোঁচা দেবেই; যদিও তখন লেভারকুজেনে অনুষ্ঠিতব্য সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অলিভার বিয়ারহফ এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ঐ কাহিনী ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
"তর্কসাপেক্ষে বলা যায় যে, গত দু মাস ধরে যে বিষয়টা আমার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো আমার প্রতি জার্মান ফুটবল বোর্ডের অসদ্ব্যবহার, বিশেষ করে বোর্ড প্রেসিডেন্ট রাইনহার্ড গ্রিন্ডেলের আচরণ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে ছবি তোলার পর ইওয়াখিম ল্যোভ আমাকে অবিলম্বে ছুটি বাদ দিয়ে সোজা বার্লিনে গিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে সোজাসুজিভাবে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলেন। আমি এই ছবি তোলার পিছনে আমার জাতিসত্তা বা পারিবারিক ইতিহাসের যুক্তি যতোই দাঁড় করাতে চেয়েছি, গ্রিন্ডেল তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দিয়ে আমাকে ততোই হেয় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। যদিও তাঁর কাণ্ডকীর্তি পুরোটাই ছিলো হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে, তারপরেও আমরা এটুকুতে সম্মত হই যে ঐ পরিস্থিতিতে ফুটবল এবং আসন্ন বিশ্বকাপের ব্যাপারে মনোযোগ দেয়াটাই ভালো ছিলো। এজন্যই আমি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সময়টায় জার্মান ফুটবল বোর্ডের "মিডিয়া ডে" -তে অংশগ্রহণ করিনি। আমি জানতাম যে, যেসব সাংবাদিক ফুটবল বাদ দিয়ে রাজনীতি নিয়ে কথা বলবে, তারা আমাকে খোঁচা দেবেই; যদিও তখন লেভারকুজেনে অনুষ্ঠিতব্য সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অলিভার বিয়ারহফ এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ঐ কাহিনী ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
এর মধ্যে আমি জার্মানির রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাংক- ওয়াল্টার স্টাইনমেয়ার- এর সাথেও দেখা করেছিলাম। উনি গ্রিন্ডেলের মতো নন, বরং আমার সিদ্ধান্তের পেছনে আমার পরিবার, জাতিসত্তা ও যুক্তি কী, বক্তব্য কী - তা শুনতে আগ্রহী ছিলেন। এই মিটিংটা ছিলো আমার, ইলকে (গুন্দোয়ান) এবং রাষ্ট্রপতি স্টাইনমেয়ারের মধ্যে, যদিও এক্ষেত্রে ওখানে গিয়ে তাঁর রাজনৈতিক এজেন্ডার পক্ষে ওকালতি করতে না দেয়ায় গ্রিন্ডেল অসন্তুষ্ট ছিলেন। আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে একটা যৌথ বিবৃতি দিতে প্রেসিডেন্ট স্টাইনমেয়ারের প্রস্তাবে রাজি হই, যা ফুটবলে মনোনিবেশ করার আরেকটা চেষ্টা ছিলো। কিন্তু গ্রিন্ডেলের সাঙ্গপাঙ্গরা না হয়ে কেন প্রেসিডেন্ট স্টাইনমেয়ারের প্রেস অফিস এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে গেলো, সে ব্যাপারেও গ্রিন্ডেল অখুশি ছিলেন।বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই গ্রিন্ডেল তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য যৌক্তিক কারণেই ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। যদিও উনি বার্লিনে আমাকে বলেছিলেন যে, কাহিনী ওখানেই শেষ, কিন্তু তারপরেও সম্প্রতি উনি আবারও প্রকাশ্যে আমাকে ওটার জন্য কারণ দর্শাতে বলেছেন এবং রাশিয়ায় বাজে পারফরম্যান্সের জন্য আমাকে দায়ী করেছেন। এখন আমি যা বলছি, তা আমি স্বেচ্ছায় বলছি- গ্রিন্ডেলের হয়ে বা তাঁর আদেশে নয়। আমি আর এক মুহুর্তও তাঁর নিজের কাজে অদক্ষতা আর অক্ষমতার জন্য বলির পাঁঠা হতে পারবো না। আমি জানি যে, ছবিটা তোলার পর থেকেই উনি আমাকে দল থেকে বের করে দিতে চেয়েছেন এবং কোনো আলোচনা না করেই বা আগে-পিছে কিছু চিন্তাভাবনা না করেই উনার এই মতামত উনি টুইটারে শেয়ার করেছেন, কিন্তু ইওয়াখিম ল্যোভ এবং অলিভার বিয়ারহফ আমার সাথে ছিলেন এবং আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। গ্রিন্ডেল এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের চোখে আমরা যখন জিতি তখন আমি জার্মান, আর আমরা যখন হারি তখন আমি অভিবাসী। এর কারণ হলো, জার্মান সমাজে এখনও আমি অনাহুত, যদিও আমি জার্মানিতে ট্যাক্স দেই, জার্মান স্কুলগুলোর জন্য ডোনেশন দেই এবং ২০১৪ সালে আমি জার্মানির হয়েই বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। আমাকে "আলাদা" হিসেবেই গণ্য করা হয়; যদিও আমি ২০১০ সালে জার্মান সমাজে সফল অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতিস্বরূপ "বামবি এ্যাওয়ার্ড" অর্জন করেছিলাম। ২০১৪ সালে আমি জার্মান সরকারের তরফ থেকে "সিলভার লরেল লিফ" অর্জন করি এবং ২০১৫ সালে আমি ছিলাম জার্মান ফুটবলের একজন শুভেচ্ছাদূত। এরপরেও আমি কি পরিষ্কারভাবেই একজন জার্মান নই? একজন পরিপূর্ণ জার্মান হওয়ার জন্য এমন কোনো মাপকাঠি কি আছে যা আমি পূরণ করিনি? আমার দুই বন্ধু লুকাস পোডোলস্কি এবং মিরোস্লাভ ক্লোসা-কে কখনোই পোলিশ-জার্মান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না, তাহলে আমি কেন তুর্কি-জার্মান হিসেবে চিহ্নিত হই? এটা কি তুরস্ক বলেই এমনটা হচ্ছে? এটা কি হচ্ছে আমি মুসলিম তাই? এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। কাউকে তুর্কি-জার্মান হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে যে তার পরিবারের সদস্যরা একাধিক দেশ ও জাতিসত্তার বাহক। আমার জন্ম এবং লেখাপড়া হয়েছে জার্মানিতেই, তাহলে কেন মানুষ আমাকে একজন জার্মান হিসেবে মেনে নেয় না?
গ্রিন্ডেলের চিন্তাধারা আরও অনেক জায়গায় দেখা গেছে। বার্নড হলজহাউয়ার নামে এক জার্মান রাজনীতিবিদ আমার তুর্কি জাতিসত্তা ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে ঐ ছবিটা তোলার জন্য আমাকে "ছাগল-**"(লেখার অযোগ্য শব্দ) বলে সম্বোধন করেছেন। এছাড়াও জার্মান থিয়েটারের প্রধান ভের্নার স্টিয়ার আমাকে "আনাতোলিয়ার **" হিসেবে সম্বোধন করেছেন যেটি তুরস্ক থেকে আগত অনেক অভিবাসীরই আদি নিবাস। আমি এর আগেই যেমনটা বলেছি যে, পারিবারিক ইতিহাসের জের ধরে আমাকে সমালোচনা করা বা কটূক্তি করাটা খুবই নোংরা সীমা লংঘনের মধ্যে পড়ে এবং যারা বৈষম্যকে নিজেদের রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, অনতিবিলম্বে তাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এর পরিণতি হওয়া উচিত। এই মানুষগুলো প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে আমার তোলা ছবি ব্যবহার করেছে নিজেদের মনে লুকিয়ে রাখা বর্ণবাদী মনোভাব প্রকাশ করার জন্য, এবং এটা সমাজের জন্য বিপদজনক। সেই জার্মান ফুটবল সমর্থকের চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না, যে সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচের পরে আমাকে বলেছিলো "ওজিল, তুই তুর্কি ***, তুই তুর্কি ***, যা ভাগ" (অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায়)। আর এছাড়াও যেসব ঘৃণামূলক ইমেইল, হুমকি দেয়া ফোন কল আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব কমেন্ট আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদেরকে করা হয়েছে, তার ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাই না। ওরা সবাই এমন একটা মান্ধাতার আমলের সংকীর্ণ ও গোঁড়া জার্মানির প্রতিভূ, যে জার্মানি নিত্যনতুন সংস্কৃতিকে কাছে টেনে নেয় না এবং যে জার্মানিকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি না। আমি বিশ্বাস করি যে, যেসব গর্বিত জার্মান উদার সমাজব্যবস্থা পছন্দ করেন, তাঁরা আমার সাথে একমত হবেন।
রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল আপনাকে বলছি, আমি আপনার কাজে হতাশ হলেও অবাক হইনি। ২০০৪ সালে আপনি যখন জার্মান পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন, তখন আপনি বলেছিলেন যে, "বহুজাতিক সংস্কৃতির সহাবস্থান আসলে কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না এবং একটি চিরকালীন প্রতারণার নামান্তর"। আপনি দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং ঘুষবিরোধী আইন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন যে, "ইসলামী সংস্কৃতি অনেক জার্মান শহরেই খুব বেশিমাত্রায় মিশে গেছে"। এটা ক্ষমার অযোগ্য এবং কখনোই ভোলার মতো নয়।
গ্রিন্ডেলের চিন্তাধারা আরও অনেক জায়গায় দেখা গেছে। বার্নড হলজহাউয়ার নামে এক জার্মান রাজনীতিবিদ আমার তুর্কি জাতিসত্তা ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে ঐ ছবিটা তোলার জন্য আমাকে "ছাগল-**"(লেখার
রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল আপনাকে বলছি, আমি আপনার কাজে হতাশ হলেও অবাক হইনি। ২০০৪ সালে আপনি যখন জার্মান পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন, তখন আপনি বলেছিলেন যে, "বহুজাতিক সংস্কৃতির সহাবস্থান আসলে কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না এবং একটি চিরকালীন প্রতারণার নামান্তর"। আপনি দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং ঘুষবিরোধী আইন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন যে, "ইসলামী সংস্কৃতি অনেক জার্মান শহরেই খুব বেশিমাত্রায় মিশে গেছে"। এটা ক্ষমার অযোগ্য এবং কখনোই ভোলার মতো নয়।
জার্মান ফুটবল বোর্ড এবং আরও অনেকের কাছ থেকে যে ব্যবহার আমি পেয়েছি, তাতে জার্মানি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার আর অবশিষ্ট নেই। আমার নিজেকে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হচ্ছে এবং এটাও মনে হচ্ছে যে, ২০০৯ সালে আমার অভিষেকের পরে আমার যতো অর্জন আছে, সব ভুলে যাওয়া হয়েছে। বর্ণবৈষম্যের ইতিহাস আছে এমন কাউকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুটবল ফেডারেশনে কাজ করতে দেয়া উচিত নয়, যেখানে দ্বৈত- জাতিসত্তার অনেক ফুটবলার খেলছেন। উনারা তথাকথিতভাবে যেসব খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের সাথে উনাদের আচরণ কোনোভাবেই যায় না।
খুবই দুঃখভারাক্রান্ত
- মেসুত ওজিল
@কোথাও ধর্ম নিয়ে উগ্রতা তো কোথাও রাজনীতি বা জাতীয়তাবাদে উগ্রতা। দুনিয়াটাই এখন উগ্রতা দিয়ে ভরপুর। কোন জায়গা থেকে কোথায় নিয়ে গেছে একটা ফটো তোলাকে কেন্দ্র করে যেখানে চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেলও বলেছেন ওজিল এত ভেবে এটা করে নাই। ওকে সাপোর্ট করা উচিত সবার।
No comments:
Post a Comment